রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৪৭ অপরাহ্ন

সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবার নামে হয়রানি, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধ ॥
সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের ভরসাস্থল সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবার নামে হয়রানি, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। সরকারি এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে এখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এখন হুমকির মুখে।

দালালদের দৌরাত্ম্য ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়
হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য এখন তুঙ্গে। অভিযোগ আছে, হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারী দালালদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে। তারা রোগীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠাচ্ছে এবং সেখান থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নিচ্ছে। রোগীদের অভিযোগ, আউটডোরে প্রতিটি টিকিটের জন্য ৩ টাকা নির্ধারিত থাকলেও কাউন্টারে নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। বাড়তি ২ টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে কাউন্টার থেকে বলা হয়, “ভাঙতি টাকা নেই।” প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীর কাছ থেকে এভাবে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

নিম্নমানের খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
রোগীদের জন্য নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। খাবারের মানও অত্যন্ত নিম্নমানের, প্রায়ই নোংরা ও বাসি খাবার দেওয়া হয়। হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে, যা রোগীদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

চিকিৎসকদের অবহেলা এবং ওষুধের অভাব
রোগীরা সঠিক সময়ে চিকিৎসক ও নার্সদের সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। অনেক সময় প্রয়োজনীয় ওষুধও হাসপাতালে পাওয়া যায় না, ফলে রোগীদের বাইরে থেকে চড়া দামে ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হয়। রিপা, নোমান, আসফা এবং আবু সিদ্দিকের মতো বেশ কয়েকজন রোগী জানান, তাঁরা পা ফোলা, ফোড়া, চুলকানি ও দাঁতের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা পাননি। তাঁদের সবার কাছ থেকেই টিকিটের জন্য অতিরিক্ত ২ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানোর অভিযোগ
সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও রোগীদের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে অতিরিক্ত খরচ চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী কিছুদিন আগে কানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এলে তাঁকে ‘এফ এম হিয়ারিং কেয়ার সেন্টার’-এ পাঠানো হয়, যেখানে ভিজিট বাবদ মোটা অংকের টাকা নির্ধারণ করা হয়। জানা যায়, এই সেন্টারটি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আবিদা আক্তারের ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে আবিদা আক্তার দাবি করেন, রোগ নির্ণয়ের জন্য ভালো জায়গায় পাঠানো হয়েছে, কোনো কমিশনের জন্য নয়।

জনগণের দাবি
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে দ্রুত এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা এবং হাসপাতালের পরিষেবার মান উন্নত করা এখন সময়ের দাবি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com